North America Bangla Literature and Culture Convention 2014

নিউইয়র্কে উত্তর আমেরিকা বাংলা সাহিত্য সম্মেলন ২০১৪ অনুষ্ঠিত

বিশেষ প্রতিনিধি : সকল অতিথির হাতে হাতে মঙ্গলপ্রদীপ। উদ্বোধনী সঙ্গীতে কন্ঠ দিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পী শহীদ হাসান। মিউজিকের অনুরণনে আপ্লুত
ভর্তি দর্শক-শ্রোতা-সাহিত্য অনুরাগীরা। পড়ন্ত বিকেল ভরে উঠলো এক অনন্য অভায় জীবনের জন্য সাহিত্য- এই মুখ্যবাণীকে উপজীব্য করে নিউইয়র্কে উত্তর আমেরিকা
বাংলা সাহিত্য সম্মেলন-২০১৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে ভাষা শহীদ, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলা ভাষা-সাহিত্যের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনেরমধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এবারের সাহিত্য সম্মেলনের প্রধান আয়োজক ছিল গাঙচিল সাহিত্য আসর ও প্রবাসী ফাউন্ডেশন ইউএসএ। বিশিষ্ট কবি ফকির ইলিয়াস ও ছন্দা বিনতে সুলতানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের হলরুম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ২৯ জুলাই ২০১৪ শুক্রবার বিকেলে জ্যাকসন হাইটসের সুপরিচিত 'জুইশ সেন্টারে' অনুষ্ঠিত হয় এই সম্মেলন। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সাপ্তাহিক ঠিকানা'র সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি, বিশিষ্ট সমাজসেবক -সাংবাদিক, সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য অনিুজ্জামান খোকন, বিশিষ্ট লেখক ডঃ অর্ভিন ঘোষ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক এ কে এম সালামতউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডঃ গিয়াস উদ্দীন ও কবি তমিজ উদদীন লোদী।
 সম্মেলনে 'বাংলা সাহিত্য দেশে বিদেশে'- শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন- লেখক প্রতীপ দাশগুপ্ত, লেখক ও সাংবাদিক হারুন চৌধুরী, লেখক i^স্বপন বসু, সাংবাদিক শাখাওয়াত হোসেন সেলিম, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুর আহমদ, লেখক প্রদীপ মালাকার, ও লেখক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।'অভিবাসী সাহিত্য ও ধারাবাহিকতা'- শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন কবি তমিজ উদদীন লোদী। তিনি বলেন, একজন কবি কিংবা লেখক অভিবাসী হবার পর তার দুটো ঠিকানা গড়ে উঠে। একটি তার জন্মভূমি আর অন্যটি তার নিজের বাসভূমি। কিন্তু বিশ্বসাহিত্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ঐ লেখক তার জন্মভূমিকে আবর্তন করেই রচনা করেন তার মূল্যবান সাহিত্য। তিনি বলেন, এই গ্লোবাল ভিলেজ আমাদেরকে খুব কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। তাই অভিবাস শব্দটি এখন বিশ্বগ্রাম।কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, অভিবাসে থেকে অনেক বড় বড় সাহিত্যিক তাদের পাঠকপ্রিয় লেখাগুলো লিখেছেন। এখনও লিখছেন। এই উত্তর আমেরিকা থেকেও এমন সাহিত্য রচিত হবে সে প্রত্যাশা আমরা করেই যাচ্ছি।পশ্চিম বাংলার খ্যাতিমান সাহিত্যিক ডঃ অর্ভিন ঘোষ তার নিজ লেখার কয়েকখণ্ড পড়ে শোনান। তিনি বলেন- এমন আয়োজন প্রজন্মকে শাণিত করবে।বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক এ কে এম সালামতউল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, বাংলা বিশ্বের ষষ্ঠ প্রধান ভাষা। এই ভাষার ইতিহাস-ঐতিহ্য খুব উজ্জ্বল। তিনি বিদেশে নিজ প্রফেশনের প্রয়োজনেই বাংলা ভাষা শেখার জন্য প্রজন্মকে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, একজন ডাক্তার কিংবা একজন আইনজীবী যদি একটি ভাষায় কথা বলা কিংবা লেখার কৃতিত্ব দেখাতে পারেন- তা কিন্তু তার পেশাগত জীবনকেই সমৃদ্ধ করবে। তাই বাংলা শেখা উচিৎ নিজের প্রয়োজনেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও যুক্তরাষ্ট্রে ভিজিটিং প্রফেসর ডঃ গিয়াস উদ্দীন বলেন, আমরা যেখানেই থাকি না কেন, যেন শিকড়ের সন্ধান ভুলে না যাই। তিনি বিজ্ঞান মনস্ক সাহিত্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, উত্তর আমেরিকা উপাত্তের দেশ। এখানের আর্কাইভ আমাদেরকে পড়াশোনার দরজা অবারিত রেখেছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, এটা আশার কথা আমেরিকায়ও গড়ে উঠছে মিনি বাংলাদেশ। এখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রদীপ জ্বলছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির অভ্যুদ্বয়ের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলা ভাষা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার পথটি দেখিয়েছে। আর এজন্যও প্রবাসী বাঙালীদের দান অপরিসীম। বিশেষ অতিথি, উত্তর আমেরিকার প্রথম বাংলা টিভি 'রূপসী বাংলা'র মহাপরিচালক ও সাবেক সংসদ সদস্য আনিসুজ্জামান খোকন বলেন, আমি প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষা-সাহিত্য-শিল্প বিকাশের যে স্বপ্ন দেখতাম, তা আজ যৌবনে এসে পদার্পণ করেছে। আমি আনন্দিত আজ লাখো বাঙালী বাস করেন এই নিউইয়র্কে। হাজারো বাংলা ভাষাভাষির পদচারণায় মুখরিত আজকের সম্মেলন। তিনি বলেন, প্রজন্ম আর হয়তো আমি যে ভূমি থেকে এসেছিলাম- সেখানে ফিরে যাবে না। কারণ অভিবাস মানেই গ্রহণ, প্রত্যাবর্তন নয়। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই আমাদেরকে পরবাসে নিজেদেরকে সাহিত্যে-শিল্পে শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে হবে। প্রধান অতিথির ভাষণে বহির্বিশ্বে সর্বাধিক প্রচারিত  সাপ্তাহিক ঠিকানা'র সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি,বিশিষ্ট সমাজসেবক-সাংবাদিক, সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন বলেন, আমি নান্দনিক সৃজনশীলতায় বিশ্বাস করি। সাপ্তাহিক ঠিকানা একুশে ফেব্রুয়ারীর জাতক। আর সেই আলোকেই ঠিকানা, বাংলা ভাষা-সাহিত্য ও অভিবাসী প্রজন্মকে আলোর দিশা দেখিয়ে যাচ্ছে গেল পঁচিশ বছর থেকে। তিনি বলেন, ঠিকানা উত্তর আমেরিকায় লেখক সৃষ্টিতে প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছে এবং করবে। তিনি বলেন, সাহিত্য জীবনের কথা বলে। আমি একজন রাজনীতিক। সাহিত্য-শিল্প, রাজনীতি বিবর্জিত বিষয় নয়। তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেন আগামীতে আরও বড় আকারে সম্মেলন অনুষ্ঠানে ঠিকানা সকল দায়িত্ব পালন করবে। এবারের সাহিত্য সম্মেলনের প্রধান আয়োজক গাঙচিল সাহিত্য আসর ও প্রবাসী ফাউন্ডেশন ইউএসএ কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ঠিকানা সকল মহৎ আয়োজনের শরিক হতে চায়। প্রধান অতিথি তার সারগর্ভ বক্তব্যে বলেন,আজকের এই সমাবেশের প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। আর নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করেই আমরা আমাদের সমাজকে, আমাদের প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। এবারে সাহিত্য সম্মেলনে দশজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে 'সম্মাননা পদক'- প্রদান করা হয়। এবছর সাহিত্য সম্মাননা পদক পেয়েছেন, আশির দশকের শক্তিমান গল্পকার ও কবি তমিজ উদদীন লোদী। সংবাদ মাধ্যম হিসেবে পদক পেয়েছে সাপ্তাহিক ঠিকানা। শিক্ষা প্রসারে পদক পেয়েছে - খান'স টিউটোরিয়াল ও মামুন'স টিউটোরিয়াল। কন্ঠশিল্পী হিসেবে পদক পেয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পী নীলুফার বানু লিলি ও প্রবাসী প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী ন্যান্সি খান। কম্যুনিটি একটিভিস্ট ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন- মাজেদা আক্তার উদ্দীন। মূলধারায় বাংলা ভাষার প্রসারে পদক পেয়েছেন- শারমিন সুলতানা। আবাসন ও সমাজসেবায় পদক পেয়েছেন বিশিষ্ট রিয়েলটর জাকির খান এবং ব্যবসা-বানিজ্য প্রসারে পদক পেয়েছেন কাজী এ হোসেন। পুরস্কার প্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দ। পদকপ্রাপ্তদের পক্ষে খান'স টিউটোরিয়ালের নাঈমা খান বলেন, শিক্ষাই প্রজন্মের মূল হাতিয়ার। আমরা আমাদের প্রজন্মকে সুযোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে গড়ে তুলবো এটাই হোক সকলের প্রত্যায়। এর পরের পর্বে ছিল স্বরচিত কবিতা পাঠ ও কবিতা আবৃত্তি। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে উৎসর্গকৃত কবিতা পাঠপর্বে অংশ নেন - তমিজ উদদীন লোদী, শামস আল মমীন, সৈয়দ মামুনুর রশীদ, জুলি রহমান, মিজানুর রহমান প্রধান, কাউসারী মালেক রোজী, মোখলেসুর রহমান, সুরীত বড়ুয়া, আহমেদ ছহুল, মুনিয়া মাহমুদ, সাকিনা ডেনি, শহীদুল সরকার, ছন্দা বিনতে সুলতান, কিবরিয়া চৌধুরী, স্বপ্ন কুমার, নিখিল কুমার রায়, স্বপন বসু, শামসুল হক খান, শরিফুল আলম, মোহাম্মদ আলী বাবুল, শাইখ পীরজাদা নূরুল হুদা, নূর ইসলাম বর্ষণ, পারভীন বানু, মাহবুবুর রহমান,প্রমুখ। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া জেরিন মাঈসা'র বাংলা কবিতা আবৃত্তি সকলের কাছে ব্যাপক নন্দিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মাঝে উপস্থিত ছিলেন- সাপ্তাহিক বর্ণমালার সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার আব্দুল মুকিত চৌধুরী, ডেইলি নিউ নেশনের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি তাসের মাহমুদ, বিশিষ্ট কম্যুনিটি একটিভিস্ট নাসির আলী খান পল, ইমাম কাজী কায়্যুম, প্রমুখ। এবছরের সম্মেলনে অন্যান্য সহযোগী সংগঠনগুলো ছিল- উত্তর আমেরিকা কেন্দ্রীয় কবিতা পরিষদ,হুমায়ুন আহমেদ মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশন, রাইমিং পোয়েটস ইন্টারন্যাশনাল, প্রবাসী লেখক গোষ্ঠী, আবৃত্তি একাডেমি অব নর্থ আমেরিকা, বাংলাদেশ কমিউনিটি অব পোকেপসী, খান'স টিউটোরিয়াল, মামুন'স টিউটোরিয়াল, বাংলাদেশ আমেরিকান কালচারাল একাডেমি,বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস(বিপা), সুর বাহার বাংলাদেশ কালচারাল একাডেমি, সুর ও বাণী সঙ্গীত একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় ঐতিহ্য সংরক্ষণ পরিষদ, বাংলাদেশ কালচারাল সোসাইটি অব নর্থ আমেরিকা, মোহাম্মদী সেন্টার জ্যাকসন হাইটস, আমেরিকান বাংলাদেশী আর্টিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ কমিউনিটি অব হাডসনভ্যালী, বাংলাদেশ এডুকেশান এন্ড কালচারাল সোসাইটি অন নর্থ আমেরিকা, সুর ও রং একাডেমি অব ক্লাসিক্যাল মিউজিক, সঙ্গীত একাডেমি নিউইংল্যাণ্ড, সুশীল সমাজ নিউইয়র্ক, রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংসদ, সাজুক্তা সাহিত্য ক্লাব, প্রবাসী শিল্পী গোষ্ঠী, ভালোবাসার মন্চ ইউএসএ, এশিয়ান আমেরিকান ফ্রেন্ডশীপ সোসাইটি, প্রবাসী আড্ডা সোশ্যাল ক্লাব, ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলাপমেন্ট, ও গাঙচিল থিয়েটার।অনুষ্ঠানের শেষপর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, নীলুফার বানু লিলি, সুলতান মাহমুদ। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন ওস্তাদ হারুনুর রশীদ। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন দিলরুবা আবেদীন। সঙ্গীত সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন ডঃ শাহনাজ আলম। সম্মেলনের আহ্বায়ক নূরুল আবেদীন ও সদস্য সচিব খান শওকতের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে মধ্যরাতে শেষ হয় সম্মেলন

No comments:

Total de visualizações de página

SEarch